হাওজা নিউজ এজেন্সি: খেলা-ধুলা হচ্ছে শৈশবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা নিছক আনন্দের বাইরেও অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এটি শুধু আবেগিক ও জ্ঞানগত বিকাশে সাহায্য করে না, বরং সামাজিক ও শারীরিক দক্ষতা গঠনের ক্ষেত্রেও তা এক কার্যকর মাধ্যম। ইসলামি শিক্ষায় বারবার শৈশবে খেলার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং একে শিক্ষাদান ও প্রতিভা বিকাশের জন্য অপরিহার্য ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে হুজ্জতুল ইসলাম মোস্তফা মির্জায়ী, যিনি একজন মনোবিজ্ঞানী, শিশু বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা, তিনি খেলার মাধ্যমে শিশুর বিকাশ বিষয়ে কিছু মূল্যবান অভিমত উপস্থাপন করেছেন। নিচে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো:
খেলাধুলার উপকারিতা এবং তা কীভাবে শিশুদের সামাজিক ও আবেগিক বিকাশে সহায়তা করে?
১. জ্ঞানগত বিকাশ
খেলার প্রথম উপকারিতা হলো শিশুদের চিন্তাশক্তি ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি। বিশেষ করে বুদ্ধিবৃত্তিক খেলাগুলো শিশুকে শেখায় কীভাবে সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় এবং সমাধানের পথ খুঁজে পেতে হয়। এদের মাধ্যমে শিশু ‘চেষ্টা’ ও ‘পরিশ্রম’-এর গুরুত্ব বুঝতে শেখে।
২. সামাজিক বিকাশ
শিশুরা খেলার মাধ্যমে শেখে কিভাবে অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয়, বন্ধুত্ব গড়তে হয় এবং মতভেদ হলে সমাধানে পৌঁছাতে হয়। এই সামাজিক দক্ষতাগুলো ভবিষ্যতে কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনে সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।
৩. আবেগিক বিকাশ
খেলার সময় শিশু শেখে কিভাবে তার আবেগ প্রকাশ করতে হয়, রাগ বা হতাশা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং সহমর্মিতা গড়ে তুলতে হয়। খেলনার ভাঙা, হারানো কিংবা জেতা-হারার মধ্য দিয়ে তারা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মানসিকতা তৈরি করে।
৪. চিন্তা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি
খেলা শিশুর কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি করে। বিশেষত চিন্তাশক্তি-উন্নয়নমূলক খেলাগুলো তাকে শেখায় কিভাবে বিকল্প পথ খুঁজে নিতে হয়।
৫. চাপ ও দুশ্চিন্তা হ্রাস
খেলা শিশুর মানসিক চাপ কমায় এবং তাকে মানসিকভাবে আরাম দেয়। এটি তার সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
ব্যস্ত পিতামাতার জন্য কার্যকর কিছু খেলাধুলার পরামর্শ:
অনেক পিতামাতা কাজের ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারেন না। তাই এমন কিছু খেলার পরামর্শ দেওয়া হয় যা খুব বেশি সময় না নিয়েও কার্যকর হয়:
- ভূমিকা-ভিত্তিক খেলা (role play)
- ব্লক বা লেগো দিয়ে গঠনমূলক খেলা
- কল্পনাশক্তির খেলা (যেমন: ডাক্তার-রোগী, দোকান-পাট)
- সংক্ষিপ্ত বোর্ড গেম
- গল্প বলা ও নাটকীয় উপস্থাপনা
ইসলামি শিক্ষা ও আহলে বাইতের (আ.) সীরাতে খেলার গুরুত্ব: ইমামদের জীবনীতে দেখা যায় যে, তাঁরা খেলাধুলাকে উৎসাহ দিতেন। হাদিসসমূহে মাটি দিয়ে খেলা, পানির সঙ্গে খেলা, সাঁতার, ঘোড়ায় চড়া, তীর চালনা ও আত্মরক্ষামূলক খেলার প্রতি উৎসাহ রয়েছে। যদিও আজকের দিনে প্রযুক্তির কারণে খেলার ধরণ বদলেছে, তবে মূল উদ্দেশ্য একই—শিশুর বিকাশ।
পরিশেষ, খেলার মাধ্যমে শিশুর জীবনবোধ, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহমর্মিতা, সৃজনশীলতা এবং সম্পর্ক স্থাপনের দক্ষতা গড়ে ওঠে। তাই পিতামাতার দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ ও উপযোগী খেলার পরিবেশ তৈরি করা যাতে তারা শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিকভাবে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে।
আপনার কমেন্ট